ট্রেডিং সাইকোলজি এবং রিস্ক ম্যানেজমেন্ট
Thu, 19 Sep 2024
Follow the stories of academics and their research expeditions
স্বর্ণ (Gold) সব সময়ই অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময় বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। কিন্তু আপনি কি জানেন কী কারণে স্বর্ণের বাজার মুভ করে? স্বর্ণের দাম ওঠানামা করার পেছনে বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, এবং সামাজিক ফ্যাক্টর রয়েছে। এই ব্লগে আমরা আলোচনা করব কী কী কারণ স্বর্ণের বাজারে পরিবর্তন ঘটায় এবং কেন এই মূল্যবান ধাতুটির দাম ওঠানামা করে।
মুদ্রাস্ফীতি স্বর্ণের বাজারে সরাসরি প্রভাব ফেলে। যখন মুদ্রার মূল্য কমে এবং জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকে, তখন বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে স্বর্ণে বিনিয়োগ করতে শুরু করেন। স্বর্ণের দাম সাধারণত মুদ্রাস্ফীতির সময় বাড়ে কারণ এটি অর্থের প্রকৃত মান রক্ষা করতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। অতএব, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির সময় স্বর্ণের চাহিদা এবং দাম দুটোই বৃদ্ধি পায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো, বিশেষত ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ (Federal Reserve), যখন সুদের হার বৃদ্ধি বা হ্রাস করে, তখন স্বর্ণের দামে প্রভাব পড়ে। যখন সুদের হার বাড়ে, তখন অন্যান্য বিনিয়োগের মাধ্যমে ভালো রিটার্ন পাওয়া যায় এবং বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণ থেকে দূরে সরে যায়। বিপরীতে, সুদের হার কমলে স্বর্ণের দাম বাড়ে কারণ অন্যান্য বিনিয়োগে রিটার্ন কমে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বর্ণের আকর্ষণ নির্ধারণ করে দেয়।
স্বর্ণের বাজার মুভ করার অন্যতম প্রধান কারণ হলো মার্কিন ডলারের শক্তি। স্বর্ণ এবং ডলারের মধ্যে সাধারণত একটি বিপরীত সম্পর্ক রয়েছে। যখন ডলার শক্তিশালী হয়, তখন স্বর্ণের দাম প্রায়শই কমে যায় কারণ ডলারের শক্তিশালী অবস্থানে অন্যান্য মুদ্রায় স্বর্ণের দাম বেশি হয়। আবার, যখন ডলার দুর্বল হয়, তখন স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পায় কারণ এটি অন্যান্য মুদ্রায় বিনিয়োগকারীদের জন্য সস্তা হয়ে যায়।
যেকোনো বড় ধরনের আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সংকট বা যুদ্ধ স্বর্ণের দামে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। যখন পৃথিবীতে অস্থিরতা বা যুদ্ধ শুরু হয়, তখন বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে স্বর্ণ কিনতে শুরু করে। উদাহরণস্বরূপ, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সময় স্বর্ণের দাম বেড়ে যায় কারণ বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ থেকে বেরিয়ে এসে নিরাপদে স্বর্ণে বিনিয়োগ করেন। ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা স্বর্ণের বাজারকে প্রায়শই সরাসরি প্রভাবিত করে।
স্বর্ণের মূল্য মূলত সরবরাহ এবং চাহিদার উপর নির্ভর করে। বিশ্বের বড় স্বর্ণ উৎপাদক দেশগুলো, যেমন চীন, অস্ট্রেলিয়া, এবং রাশিয়া, যদি উৎপাদন হ্রাস করে, তবে স্বর্ণের সরবরাহ কমে যায়, যা তার দামের ওপর প্রভাব ফেলে। এছাড়াও, সারা বিশ্বে গহনা ও প্রযুক্তিগত প্রয়োজনে স্বর্ণের চাহিদা থাকলে, এর দাম বাড়তে থাকে। চাহিদা যখন বাড়ে, তখন দামও ঊর্ধ্বমুখী হয়।
অর্থনৈতিক মন্দার সময় স্বর্ণের দাম প্রায়ই বাড়তে থাকে। যখন অর্থনীতির পরিস্থিতি খারাপ হয়, তখন বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসেট থেকে বেরিয়ে এসে নিরাপদে স্বর্ণে বিনিয়োগ করতে চান। স্বর্ণের স্থিতিশীলতার কারণে অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময় এটি বিনিয়োগকারীদের প্রথম পছন্দ হয়ে ওঠে। অতএব, যেকোনো ধরনের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সময় স্বর্ণের বাজারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়।
বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো প্রায়শই তাদের রিজার্ভ বাড়াতে বা কমাতে স্বর্ণ কেনা-বেচা করে থাকে। যখন কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বর্ণের মজুদ বাড়ায়, তখন স্বর্ণের দাম বাড়ার প্রবণতা থাকে। বিপরীতে, যখন তারা স্বর্ণ বিক্রি করে, তখন বাজারে সরবরাহ বাড়ে এবং দাম কমে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কেনা-বেচার কার্যক্রম স্বর্ণের বাজারে প্রভাব বিস্তার করে।
স্বর্ণের বাজারের মুভমেন্টের পেছনে অনেকগুলি কারণ কাজ করে। মুদ্রাস্ফীতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা, ডলারের শক্তি, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, এবং সরবরাহ-চাহিদার মত কারণগুলো স্বর্ণের দামে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। একজন সফল বিনিয়োগকারী হওয়ার জন্য, এই সব ফ্যাক্টরগুলোর উপর নজর রাখা এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। স্বর্ণের বাজারের পরিবর্তনগুলিকে বুঝে নেওয়া গেলে এর থেকে লাভবান হওয়া সম্ভব।
Thu, 19 Sep 2024
Mon, 16 Sep 2024
Sun, 15 Sep 2024
Leave a comment