ফরেক্স ট্রেডিংয়ে সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স
সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স ফরেক্স ট্রেডিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এই স্তরগুলো দামের গতিবিধি বুঝতে এবং সঠিক ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক। এগুলো এমন মানসিক বাধা হিসেবে কাজ করে, যেখানে দাম প্রায়ই থেমে যায়, বিপরীতমুখী হয় বা স্থিতিশীল থাকে।
সাপোর্ট কী?
সাপোর্ট হলো একটি প্রাইস লেভেল, যেখানে একটি অ্যাসেটের চাহিদা এত বেশি হয় যে দাম আর নিচে নামে না। এই স্তরে ক্রেতারা বিক্রেতাদের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, যার ফলে দাম উপরে উঠতে শুরু করে।
- সাপোর্টের বৈশিষ্ট্য:
- এটি দামের জন্য একটি "ফ্লোর" হিসেবে কাজ করে।
- ট্রেডাররা এই স্তরে কেনার পরিকল্পনা করতে পারেন।
- শক্তিশালী সাপোর্ট স্তর সাধারণত পূর্ববর্তী নিম্নমানের কাছাকাছি থাকে।
রেসিস্ট্যান্স কী?
রেসিস্ট্যান্স হলো একটি প্রাইস লেভেল, যেখানে একটি অ্যাসেটের সরবরাহ এত বেশি হয় যে দাম আর উপরে উঠে না। এই স্তরে বিক্রেতারা ক্রেতাদের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, যার ফলে দাম নিচে নামতে শুরু করে।
- রেসিস্ট্যান্সের বৈশিষ্ট্য:
- এটি দামের জন্য একটি "ছাদ" হিসেবে কাজ করে।
- ট্রেডাররা এই স্তরে বিক্রির পরিকল্পনা করতে পারেন।
- শক্তিশালী রেসিস্ট্যান্স স্তর সাধারণত পূর্ববর্তী উচ্চমানের কাছাকাছি থাকে।
সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স চিহ্নিত করার উপায়
দামের ইতিহাস দেখে:
- সেই এলাকাগুলো খুঁজে বের করুন, যেখানে দাম বারবার থেমে গেছে বা বিপরীতমুখী হয়েছে।
- লাইন চার্ট বা ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট ব্যবহার করুন।
গোল সংখ্যাগুলো ব্যবহার করে:
- যেমন ১.২০০০ বা ১.৫০০০ প্রায়ই মানসিক সাপোর্ট বা রেসিস্ট্যান্স হিসেবে কাজ করে।
ট্রেন্ডলাইন:
- ধারাবাহিক উঁচু (রেসিস্ট্যান্স) বা নিম্ন (সাপোর্ট) বিন্দু সংযোগ করে তির্যক লাইন আঁকুন।
মুভিং অ্যাভারেজ:
- ৫০-দিন বা ২০০-দিনের মতো মুভিং অ্যাভারেজ ব্যবহার করে গতিশীল সাপোর্ট/রেসিস্ট্যান্স চিহ্নিত করা যায়।
ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট লেভেল:
- ফিবোনাচি স্তর (যেমন ৩৮.২%, ৫০%, ৬১.৮%) প্রায়ই সাপোর্ট বা রেসিস্ট্যান্স এলাকাগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে যায়।
পিভট পয়েন্ট:
- পূর্ববর্তী প্রাইস অ্যাকশনের ভিত্তিতে নির্ধারিত স্তর, যা পরবর্তী ট্রেডিং সেশনের সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স ভবিষ্যদ্বাণী করতে সাহায্য করে।
সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্সের কার্যপ্রণালী
রোল রিভার্সাল:
- দাম যদি রেসিস্ট্যান্স ভেঙে উপরে যায়, তবে সেটি নতুন সাপোর্ট হয়ে যেতে পারে।
- একইভাবে, দাম যদি সাপোর্ট ভেঙে নিচে নামে, তবে সেটি নতুন রেসিস্ট্যান্স হয়ে যেতে পারে।
স্তরের শক্তি:
- দাম যতবার একটি সাপোর্ট বা রেসিস্ট্যান্স স্তর স্পর্শ করে এবং ভাঙে না, ততবার সেই স্তরটি শক্তিশালী হয়।
ব্রেকআউট এবং ফেকআউট:
- ব্রেকআউট: দাম শক্তিশালী সাপোর্ট বা রেসিস্ট্যান্স স্তর ভেঙে নতুন দিক নির্দেশ করে।
- ফেকআউট: দাম সাময়িকভাবে একটি স্তর ভাঙে, তারপর বিপরীতমুখী হয়।
সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স ভিত্তিক ট্রেডিং কৌশল
১. রেঞ্জ ট্রেডিং:
- রেঞ্জিং মার্কেটে সাপোর্টের কাছে কিনুন এবং রেসিস্ট্যান্সের কাছে বিক্রি করুন।
- স্টপ-লস অর্ডার সাপোর্ট বা রেসিস্ট্যান্স স্তরের একটু বাইরে রাখুন।
২. ব্রেকআউট ট্রেডিং:
- যখন দাম একটি শক্তিশালী সাপোর্ট বা রেসিস্ট্যান্স স্তর ভেঙে যায়, তখন ট্রেডে প্রবেশ করুন।
- ব্রেকআউট নিশ্চিত করতে উচ্চ ভলিউম বা ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন ব্যবহার করুন।
৩. ট্রেন্ড ট্রেডিং:
- আপট্রেন্ডে, সাপোর্ট স্তরগুলোকে কেনার পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করুন।
- ডাউনট্রেন্ডে, রেসিস্ট্যান্স স্তরগুলোকে বিক্রির পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করুন।
সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স ব্যবহারের টিপস
- সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স নিশ্চিত করতে অন্যান্য ইন্ডিকেটর (যেমন RSI, MACD) ব্যবহার করুন।
- শুধুমাত্র পূর্ববর্তী স্তরের ওপর নির্ভর না করে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী স্তরগুলো সামঞ্জস্য করুন।
- এই স্তর চিহ্নিত করার জন্য ডেমো অ্যাকাউন্টে প্র্যাকটিস করুন।
- ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের জন্য সঠিক স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করুন, বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ স্তরের কাছে।
সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স বিশ্লেষণের সরঞ্জাম
- মেটাট্রেডার ৪/৫ (MT4/MT5): চার্টে স্তর আঁকার জন্য ড্রয়িং টুল ব্যবহার করুন।
- ট্রেডিংভিউ: উন্নত চার্টিং টুল এবং ইন্ডিকেটর অফার করে।
- ফিবোনাচি টুল: স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিট্রেসমেন্ট স্তর প্লট করে।
সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স ফরেক্স ট্রেডিংয়ের একটি অপরিহার্য অংশ, যা বাজারের মনস্তত্ত্ব এবং সম্ভাব্য দামের গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে। এই স্তরগুলো আয়ত্ত করলে আপনার ট্রেডিং দক্ষতা এবং ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে উন্নতি হবে।
আরও বিস্তারিত গাইডের জন্য ভিজিট করুন ForexShikhon.com!
Leave a comment